ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা আজকাল অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে যারা সারা দিন ডেস্কে বসে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করেন, কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে এই ব্যথা প্রায় স্থায়ী হয়ে ওঠে। অনেক সময় ঘাড় ঘোরাতে গেলেই মনে হয় কেউ কশাঘাত করেছে।
কেন হয় এই ব্যথা
দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থায় বসে থাকা, শরীরের ভুল ভঙ্গি, ব্যায়ামের অভাব এবং ঘুমের সময় ভুল ভঙ্গি—সবকিছু মিলে পেশিতে টান পড়ে ও প্রদাহ তৈরি হয়। এর ফলে ঘাড় শক্ত হয়ে যায় এবং সেই ব্যথা কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসকদের মতে, এই ব্যথা সাধারণত পেশি ও লিগামেন্টের অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়। অনেক সময় এটি ‘কার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলসিস’-এর প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।
ঘাড়ে ব্যথার কারণ অনেক
যদি ভাবেন, ঘাড়-কাঁধে এমন অসহ্য ব্যথা কেন হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে এর সঙ্গে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস জড়িত।
যেমন—
- ঘুমের ভঙ্গি, বসার ভঙ্গি হতে পারে ব্যথার কারণ।
- দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা।
- ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাড় নিচু করে মোবাইল দেখা।
- খুব ভারী জিনিস তোলা বা বহন করা।
- হঠাৎ করে খুব কঠিন ব্যায়াম অভ্যাস করতে যাওয়া, এতে পেশিতে টান ধরতে পারে।
- খেলাধুলো করার সময় বা কোনো দুর্ঘটনার কারণে ঘাড়ে আঘাত লাগলে তার থেকে ব্যথা হবে।
- অনেক সময়ে দেখা যায়, ঘাড়ের হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে বা স্পাইনাল স্টেনোসিসের কারণে মেরুদণ্ডের ভেতরের ক্যানাল সরু হয়ে গেলে স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ে, তখন ব্যথা হতে পারে।
ব্যথা কমবে কী উপায়ে
- সঠিক পদ্ধতিতে বসে কম্পিউটার দেখা, সঠিক ভঙ্গিমায় ঘুমানো জরুরি।
- গরম ও ঠাণ্ডা সেঁক দিলে ব্যথা নিরাময় হতে পারে। প্রথম ১০-১৫ মিনিট ঠাণ্ডা সেঁক দিতে হবে। একটি পরিষ্কার রুমালে কয়েকটি বরফকুচি মুড়ে নিয়ে ব্য়থার জায়গায় আলতো করে চেপে রাখুন। এর পরের ১৫ মিনিট গরম সেঁক দিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে করলে ব্যথা কমতে পারে।
- ঘুমানোর সময়ে কাঁধের নিচে আরামদায়ক বালিশ রাখুন, এতে ব্যথা অনেক কমে যাবে।
- ল্যাভেন্ডার বা পেপারমিন্ট তেলের মতো এসেনশিয়াল তেল দিয়ে হালকা হাতে ঘাড় ও কাঁধে মালিশ করতে পারেন।
- কিছু ব্যায়ামেও ব্যথা কমতে পারে, যেমন— বালাসন। হাঁটু মুড়ে গোড়ালির ওপর বসুন। এবার সামনের দিকে ঝুঁকে যান। এমন ভাবে সামনে ঝুঁকতে হবে, যাতে বুক গিয়ে উরুতে ঠেকে। মাথা মেঝেতে রাখুন। আর হাত দুটি সামনের দিকে প্রসারিত করে রাখুন। ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমাতেও এই আসনের জুড়ি নেই।
অনেকক্ষণ এক দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ের পেশিগুলো নমনীয়তা হারায়। তাই দীর্ঘ সময় একদিকে তাকিয়ে থাকলেও মাঝে মাঝে মাথা দুই দিকে ঘুরিয়ে নিন। ৫-৭ সেকেন্ড এই অনুশীলন করতে পারেন। ঘাড় এক বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ৩৬০ ডিগ্রি ও বিপরীতে একই ভাবে ঘোরান। এতে ঘাড়ের পেশি নমনীয় হবে, ব্যথা কমবে।
