বিশ্বকাপে নাম লিখিয়ে ইতিহাসে দেড় লাখ মানুষের দেশ কুরাসাও

 

জনসংখ্যার বিচারে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়েছে কুরাসাও। কাল রাতে কিংস্টনের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জ্যামাইকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট কাটে ক্যারিবিয়ান সাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্র। কুরাসাও এই পথে পেছনে ফেলল ২০১৮ বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়া আইসল্যান্ডকে। ৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৬ জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ড এত দিন ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড ধরে রেখেছিল। ওয়ার্ল্ডোমিটারের জরিপে জনসংখ্যায় পৃথিবীতে ১৮৯তম এবং ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৭ জন অধিবাসীর দেশ কুরাসাও আইসল্যান্ডকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়ল। কনক্যাকাফ অঞ্চলের এই বাছাইপর্বে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে নিকারাগুয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে হাইতিও ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সর্বশেষ তাঁরা খেলেছে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। সেটাই প্রথম বিশ্বকাপে খেলা হাইতির। ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্টে ‘সি’ গ্রুপে শীর্ষস্থান নিয়ে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেল হাইতি।

 ‘এ’ গ্রুপ থেকে এল সালভাদরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে পানামা। গত মাসে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ৫ লাখ ২৫ হাজার অধিবাসীর দেশ কেপ ভার্দে। জ্যামাইকার বিপক্ষে কুরাসাও আরেকটু হলে হেরেই যেত। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে জ্যামাইকার পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেয় ভিএআর প্রযুক্তি। 

মাত্র ৪৪৪ বর্গকিলোমিটারের দেশ কুরাসাও অপরাজিত থেকে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে। ১০ বছর আগেও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৫০তম ছিল দেশটি, এখন ৮২তম। কেপ ভার্দে, উজবেকিস্তান ও জর্দানের পাশাপাশি কুরাসাওয়ের জন্যও ২০২৬ সালের আসর হবে প্রথম বিশ্বকাপ। 

নেদারল্যান্ডসের একটি অংশের স্বশাসিত দেশ কুরাসাওয়ের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ডিক অ্যাডভোকাট। ‘পারিবারিক’ কারণে জ্যামাইকার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ডাগআউট থাকতে পারেননি। কিন্তু তাঁর শিষ্যরা ঠিকই বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ায় দারুণ এক রেকর্ডও গড়েছেন ৭৮ বছর বয়সী অ্যাডভোকাট। ২০২৬ আসরে সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপের ডাগআউটে দাঁড়ানোর রেকর্ড গড়বেন অ্যাডভোকাট। ২০১০ বিশ্বকাপে গ্রিসের কোচ হিসেবে ৭১ বছর বয়সে ডাগআউটে দাঁড়ানো অটো রেহাগেলের রেকর্ড ভাঙবেন তিনি। ডাচ মিডিয়া জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডসে স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে অ্যাডভোকাট কুরাসাওয়ের খেলা দেখতে বসেন। ম্যানেজার ওয়াউটার ইয়ানসেনের সঙ্গে তিনি ফোনে যোগাযোগ রাখেন এবং বিরতির সময় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন দলকে।

 বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা সাতটি জাতীয় দলে কোচের দায়িত্ব পালন করা অ্যাডভোকাটের। তবে জ্যামাইকার হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। বিরতির পর তিনবার কুরাসাওয়ের পোস্ট কাঁপিয়েও গোল পায়নি জ্যামাইকা। দেশটিকে সরাসরি বিশ্বকাপে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর কোচের পদ ছেড়েছেন স্টিভ ম্যাক্লারেন। কুরাসাওয়ের সব খেলোয়াড়ের জন্মই নেদারল্যান্ডসে এবং তারা অ্যান্টিলিয়ান বংশোদ্ভূত। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাওয়ায় বাছাইপর্বে কনক্যাকাফ অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের মূলপর্বে তিনটি আসন ফাঁকা ছিল। কুরাসাও, পানামা ও হাইতির এই ফাঁকা আসনগুলো পূরণ করল। 

এ ছাড়া আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফের মাধ্যমে উঠে আসবে দুটি দল। প্লে–অফের এই ম্যাচগুলো আগামী মার্চে উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হবে। প্লে–অফে অংশ নিতে যাওয়া ছয়টি দল হলো—বলিভিয়া, ডিআর কঙ্গো, ইরাক, জ্যামাইকা, নিউ ক্যালেডোনিয়া ও সুরিনাম।


*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post