এলোমেলো শিক্ষা খাত, বাড়ছে সংকট

 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) প্রায় সাড়ে ৭ মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল কবীর চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) এবং সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)–এর দায়িত্বেও ছিলেন। ৬ নভেম্বর তিনি অবসর–উত্তর ছুটিতে গেছেন। ফলে একসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে যায়।

প্রথা ভেঙে প্রতিষ্ঠানটির বাইরে থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; কিন্তু পাঠ্যবই ছাপানোর এ মৌসুমে কার্যত নেতৃত্বহীন এনসিটিবি এখন নতুন বছরের শুরুতে সময়মতো পাঠ্যবই বিতরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। 

শিক্ষা খাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) মহাপরিচালক নেই মাসখানেক ধরে। একজন কর্মকর্তা কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন; কিন্তু নীতিনির্ধারণী বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। ফলে প্রশাসনিক কাজে গতি ফিরছে না। অথচ এসব পদে পদায়ন করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত কাজের একটি।

‘মাউশি এখন স্লো গতিতে চলছে,’ বললেন এই দপ্তরের একজন কর্মকর্তা। 

প্রশাসনিক নেতৃত্বহীনতা, শিক্ষাক্রমের অনিশ্চয়তা, শিক্ষক আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশেষ করে ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে তৈরি সংকট আর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরসুবিধা পাওয়ায় ভোগান্তি—সব মিলিয়ে শিক্ষা খাতে এখন একধরনের এলোমেলো ও অচলাবস্থার চিত্র ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, গণ–অভ্যুত্থানের পর মানুষ আশা করেছিল অন্তত শিক্ষা খাতে পরিবর্তন আসবে; কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে ইতিবাচক পরিবর্তনের বদলে নেতিবাচক দিকগুলো ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক দুর্বলতা আরও প্রকট হচ্ছে।

যদিও আন্দোলনের মুখে এরই মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। উৎসব ভাতাও কিছু বেড়েছে। অন্যদিকে রিট আবেদনকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের পর দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বেড়ে দশমে উন্নীত হচ্ছে। সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ, এখন প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ নিয়ে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সবশেষ প্রাথমিকে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে দেশের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) চালু হচ্ছে ১০ মাস মেয়াদি একটি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম। এগুলোই বর্তমান সময়ে এসে শিক্ষা খাতের কিছু ইতিবাচক দিক। তুলনামূলকভাবে প্রাথমিকে কাজ কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজকর্মের অবস্থা বেশি এলোমেলো।

আন্দোলন, অস্থিরতা, কর্মবিরতি

গত কয়েক মাসে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা একের পর এক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। এতে শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। 


সহকারী শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ৮ থেকে ১০ নভেম্বর টানা তিন দিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই সময় (৯ ও ১০ নভেম্বর) অনেক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলে। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ধাক্কা লাগে।

সহকারী শিক্ষকদের ১০ গ্রেডের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ মনে করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ বিষয়ে ১৮ নভেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যেখানে প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেড করার প্রজ্ঞাপনই এখনও করা যায়নি, সেখানে সহকারী শিক্ষকেরা ১০ গ্রেড দাবি করছেন! এটা কোন ধরনের যুক্তি হয়?

তবে এখন ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব বিবেচনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

অন্যদিকে সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষকেরা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে আন্দোলন করছেন। ৯ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান আর সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও বাড়িভাড়া ও ভাতা বাড়ানোর দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু করেন। ৯ দিন পর সরকার তাদের মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এটা দুই ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এ বছরের নভেম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে, বাকিটা আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরাও জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে পদোন্নতির জটিলতাও দীর্ঘদিনের। পদোন্নতির দাবিতে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষকেরা।

সব মিলিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের ব্যর্থতায় আন্দোলনের চাপে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি

অর্থসংকটের কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে অবসর ও কল্যাণসুবিধা পেতে ভোগান্তিতে ছিলেন। এখন সেই পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের ১৫ মাস পরও অবসর ও কল্যাণসুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। দুজন কর্মকর্তা সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এখন আবার নতুন দুজন কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসের পর মাস এমনকি অবসরে যাওয়ার পর দুই–তিন বছর হয়ে গেলেও নিজের প্রাপ্য সুবিধার জন্য অপেক্ষা করছেন। চাকরির শেষ প্রান্তে প্রাপ্য অবসরসুবিধা না পাওয়ায় শিক্ষকদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

সাত কলেজের অচলাবস্থা কাটছে না 

২০১৭ সালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।

এ বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কাঠামো চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যেই ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দিয়ে প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর আইনি বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কলেজগুলোরই শিক্ষকেরা। আইন পাস হওয়ার আগেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করাকে শিক্ষকেরা ‘বেআইনি’ বলছেন। তাঁদের অনেকের মতে, এর ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করা নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন হচ্ছে। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতির কারণে এসব কলেজের শিক্ষকেরা ১৮ নভেম্বর থেকে তিন দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এ জন্য কলেজগুলোতে ক্লাস হচ্ছে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান পরীক্ষাগুলো এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দ্বিধায়—কোন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের সমন্বয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গত ১৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, অধ্যাদেশসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সময়সাপেক্ষ। 

শিক্ষাক্রম কোন পথে

গত বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল।

কিন্তু জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যায়। পরিবর্তে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়। আগামী বছরও পুরোনো এই শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রম বহাল রাখা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৫ সালে এসেও এক যুগের বেশি সময় আগের শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা করানো কতটা বাস্তবসম্মত? সাধারণত পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা হয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত জুনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিকে পরিমার্জন করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। প্রথম বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে তা চালু করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।

এখন পর্যন্ত শিক্ষাক্রমের রূপরেখা তৈরির জন্য কোনো কমিটি হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে রূপরেখা আর হচ্ছে না। কারণ, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত হয় না। 

শিক্ষাক্রমবিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, কোনো শিক্ষাক্রম বাতিল হতেই পারে; কিন্তু তার বিকল্প পরিকল্পনা না থাকা মানে হলো শিক্ষার দিকনির্দেশনা হারানো। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম না করলে তা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি ডেকে আনবে।

এদিকে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ উদ্যোগ শিশু–কিশোরদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বাড়াবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। 

কমিশন হয়নি, শেষ সময়ে পরামর্শক কমিটি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন হলেও শিক্ষা খাতে কোনো কমিশন গঠন করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে শিক্ষাবিদদের সমালোচনা আছে। তাঁদের ভাষ্য, সংস্কারের ক্ষেত্রে শিক্ষাই হওয়া উচিত ছিল অন্যতম অগ্রাধিকার।

গত মাসের শেষে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে পরামর্শক কমিটি গঠন করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই কমিটি শতাধিক সুপারিশ করেছিল। যদিও সুপারিশগুলোর বেশির ভাগই আলোর মুখ দেখেনি। কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা-ও খণ্ডিতভাবে। 

এ রকম পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মনজুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে তাঁদের প্রতিবেদন দেবেন এবং সেভাবেই কাজ শুরু করেছেন। অর্ন্তর্বর্তী সরকারও যেন কিছু কাজ শুরু করে যেতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী কিছু সুপারিশও করা হবে।

পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে বলে অধ্যাপক মনজুর আহমদ আশা করেন। তিনি বলেন, যদি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সেটা আশাভঙ্গের কারণ হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারিক মনজুর মনে করেন, শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকারের তালিকায় না আনা পর্যন্ত এর নানামুখী সমস্যা কাটবে না।

অধ্যাপক তারিক মনজুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। সেটি আমরা ঠিকমতো বিবেচনাতেই নিতে পারিনি। এ জন্য যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের শিক্ষা-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কাজে দায়িত্ব দিতে হবে। অথচ দেশে রাজনৈতিক পরিচয় এবং ব্যক্তিগত সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ ও বদলির কাজ চলছে।’

অধ্যাপক তারিক মনজুর বলেন, রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষা না করে অতি দ্রুত প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করা দরকার। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও শিক্ষা-সম্পর্কিত কাজের সম্মানী যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো উচিত। শিক্ষকদেরও ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ ত্যাগ করে শিক্ষাকাজে মনোযোগী হতে হবে

 

 

 



*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post